×

Everyday: 10:00AM - 10:00PM

(+88) 01708500125

+8801708-500125

Email: care@hellodoctor.asia



× Home Our Doctors Blog Contact Us
+880-01708-500125
Everyday: 10:00AM - 10:00PM Email: care@hellodoctor.asia
Title Image

Blog

Home  /  Blog

স্তনের টিউমার মানেই ক্যানসার নয়

ডাঃ পার্থপ্রতিম সেন
2019-03-29 12:27:41

ব্রেস্ট টিউমার সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যে কথটা বলতে হয় তা হল বর্তমানে মেয়েরা আগের থেকে অনেক সচেতন এবং বাড়ির সবার স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি তারা নিজেদের সমস্যা নিয়ে অনেক বেশি ডাক্তারের কাছে যান ও সচেতনতা শিবিরগুলোতে অংশগ্রহণকরেন।

কিন্তু এখনও সমাজে অনেকরকম কুসংস্কার রয়ে গেছে। ফলে ব্রেস্ট বা স্তনে টিউমার হলে মহিলারা প্রথমেই মনে করেস বোধহয় স্তনে ক্যানসার হয়েছে। কোনো লাম্প বা ফোলা তৈরি হওয়া মানেই কিন্তু ক্যানসার হয়।

টিউমারের প্রকারভেদ

ব্রেস্ট বা স্তনে দু’ধরনের টিউমার হয়। অবশ্য শরীরের যেকোনো জায়ঘাতেই এই দু’ধরনের টিউমার হয়। একটা হল বিনাইন টিউমার যা নন ক্যানসারাস টিউমার এবং অন্যটা হল ম্যালিগন্যন্ট বা ক্যানসারস টিউমার।

বিনাইন টিউমার যেকোনো বয়সেই হতে পারে। অর্থাৎ সাত বছর থেকে সত্তর বছর যেকোনো বয়সেই দেখা যেতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বিদেশে সাধরণত চল্লিশ-পয়তাল্লিশে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ত্রিশ বছর বয়সেও খুব অল্প সংখ্যায় দেখা যায়।

বিনাইন টিউমার

 বিনাইন টিউমার সম্বন্ধে বলতে গেলে খুব পরিচিত যে টিউমারটি দেখা যায় তা হল ফাইব্রোঅ্যাডিনোমা। যেটা কিন্ পনেরো বছর বয়স থেকে আঠারো কি কুড়ি-বাইশের মেয়েদের দেখা যায়। শক্ত চাকার মতো, এক জায়ঘায় ধরলে অন্য জায়গায় পালিয়ে যায়। এই টিউমারটার আসলে গঠনগত ক্রটি দেখা যায় এবং সম্পূর্ণ বিনাইন। এই টিউমার থেকে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না। আর যেহেতু এই টিউমারগুলো থেকে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা নেই, তাই এই টিউমারগুলোকে সত্যি। অপারেশন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ওষুধেও এই টিউমারগুলো সারে না। বিদেশে কতগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। এরপর মেয়েটিকে জিঞ্জাসা করা হয় সে কী চায়? আজকালকার দিনে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করাই বাঞ্ছনীয়। কেউ যদি বলে ডাক্তারবাবু আমার অপারেশন করার ইচ্ছা নেই সেক্ষেত্রে কিন্তু গভীর পরীক্ষার মাধ্যমে নজর রাখা সম্ভভ। মজার ব্যাপার হল বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে ম্যামোগ্রামে ধরা পড়া ফাইব্রো অ্যাডিনোমাটি ষাট বা সত্তর বছর বয়সেও ম্যামোগ্রামে দেখা যাচ্ছে। তখনও  একটা ছোট্র মটরশুটির মতো দানা হয়ে রয়েছে। তাহলে ধারণা করা যেতে পারে যে এতদিন অবধি কোনো পরিবর্তন না হওয়া টিউমারটি মেরে ফেলার টিউমার নয়। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই অবজার্ভেশনে রাখা চলে। তবে রোগীর যদি মনের জোর থাকে তাহলে অবজার্ভেশনে রাখা চলে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় মুশকিল হয় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। সেক্ষেত্রে দরকার হল নিয়মিত চেক আপ। অর্থাৎ জায়গাটা বাড়ছে কি না, ব্যথা হচ্ছে কি না। যদি দেখা যায় জিনিসটা বেড়েছে বা ব্যথা হয়েছে তাহলে তখন তো অপারেশনের রাস্তা খোলাই রয়েছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এসব ক্ষেত্রে ওষুধে সারবে না। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর পরে নতুন করে কোনো ফাইব্রয়েড অ্যাডিনোমা তৈরি হয় না।

সিস্ট কাকে বলে

আর এক ধরনের লাম্প হচ্ছে সিস্ট। সিস্ট জিনিসটা হল একটা জলভরা থলি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যেরকম লোকের চুল পাকে তেমনি ব্রেস্টে কিংবা কিডনিতে সিস্ট আসবে, কিছু কিছু কোষ মরে যাবে, সেই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যাবে। একটু জল ভরে যাবে জায়গাটা। সেটাকেই সিস্ট বলে। আর এই সিস্টগুলো থেকে কখনোই ক্যানসার হয় না। তবে কিছু কিছু ক্যানসার আছে যারা সিস্ট নিয়ে বয়ে বেড়ায়। একশোটা সিস্টের মধ্যে নিরাসব্বইটাই কিন্তু বিনাইন বা নন ক্যানসারাস দেখা যায়।

বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে গিয়ে অনকে সময় স্তনে দুধ জমে যায়। ঠিকমতো দুধটা না বেরোনোর জন্য রয়ে গেল। সেটাও একটা সিস্ট। পার্থক্য হল একটা সিস্টে দুধ আছে, অন্য সিস্টে জল রয়েছে। কিন্তু দুধটা জমে থাকার দরুন আদৌ কোনো অসুবিধা হয় না। তাহলে সিস্টের মতো চাকা বা সিস্ট নিয়ে যদি কেউ আসে তাহলে এক্ষেত্রেও অপারেশনের দরকার পড়ে না।

আলট্রাসোনোগ্রাফি করে সিস্ট নির্ধারণ হয়ে গেলে ক্লিনিকেই নিডল সিরিঞ্জের সাহায্যে একটু বার করে দিলেই দুধ কিংবা জল যাই হোক সমস্যা মিটে যাবে। কাটাকুটি করার প্রয়োজন নেই। এটা করলেই পুরোপুরি নিরাময়।

ব্রেস্ট ক্যানসার

ব্রেস্ট ক্যানসার সম্বন্ধে বলতে গেলে প্রথমেই বলব ‘ব্রেস্ট ক্যানসার’ সেরে যায়। এফ.এন.এ.সি বা ‘কোর বায়োপসি’ করলে ক্যানসার কোনো দিনও ছড়ায় না। ব্রেস্ট ক্যানসার একটা মাল্টি সিস্টেমিক ডিজিজ। শুধু ব্রেস্ট ছাড়া অন্যান্য অঙ্গেরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সেই কারণে ব্রেস্ট ক্যানাসরের চিকিৎসা করাতে একজন সার্জেন ছাড়াও একজন মেডিকেল অষ্কোলজিস্ট আর একজন রেডিওথেরাপিস্টের মিলিত প্রয়াসে সুসম্পন্ন হয় এবং অবশ্যই সাহায্যের জন্য দক্ষ নার্স ও কাউন্সেলরেরও প্রয়োজন। এভাবে একটা টিম তৈরি হয়। যাদের মিলিত প্রচেষ্ট থাকে রোগীকে সমস্ত রকম উদ্বেগ ও চিন্তা থেকে মুক্ত রাখা।

লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যানাসরের লক্ষণে রোগীরা সাধারণত লাম্প, নিপল ঢুকে যাওয়া, বুতে চাকা বা গাঁট অনুভব করেন। অনক সময়স্তনবৃন্ত থেকে লাল রঙের রস বা রক্তক্ষরণ নিয়েও কেউ কেউ আসেন চিকিৎসকের কাছে। যারা লজ্জা বা ভয় উপেক্ষা করেন সেই সব কেসে বগলের তলায় চাকা অথবা স্তনের ওপরের চামড়ায় কোঁচকানো ভাব বা ঘা নিয়ে উপস্থি হওয়াটা স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে বুঝে নিতে হয় রোগটা অনেকদূর এগিয়েছে।

ওয়ান স্টপ ব্রেস্ট ক্লিনিক –এটি এখন আধুনিক ব্রেস্ট বা স্তন চিকিৎসার নবতন সংযোজন। বিদেশে এখন এটাই ফলো করা হচ্ছে। ভারতেও একই ক্লিনিকে ‘ওয়ান স্টপ ব্রেস্ট ক্লিনিক’ ফলো করা হচ্ছে। যেকোনো মহিলা তাদের স্তন সংক্রন্ত সমস্যা নিয়ে এই ধরনের ক্লিনিকে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

কেউ যদি বুকে একটা চাকা নিয়ে আসে সেও জানে না তার ক্যানসার হয়েছে কি না। তাহলে প্রথমে চিকিৎসক তাকে ক্লিনিক্যালি দেখে তারপর একটা আলট্রাসোনোগ্রাফি অথভা ম্যামোগ্রাফি করায়। এরপর এফ.এন.এ.সি অথবা কোর বায়োপসি।

এই তিনটে পদ্ধতি করলেই ধরা যাবে ‘লাম্ট’টা বিনাইন অথবা ম্যালিগন্যান্ট। কাজেই এই তিনটে পরীক্ষাই কিন্তু্ আউটযোর ট্রিটমেন্ট। ব্রেস্টের ব্যাপারটা অন্য চিকিৎসার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ধরা হয়। ক্লিনিক্যালি হল এক-তৃতীয়াংশ, আলট্রাসোনোগ্রাফ বা ম্যামোগ্রাফ এক-তৃতীয়াশ, এফ.এন.এ.সি বা কোরবায়োপসি হল আর এক-তৃতীয়াংশ। এই তিনটে মিলে আউটডোরের কনসাল্টেশনটা শেষ হয়।

ব্রেস্টের চিকিৎসা করতে গিয়ে আর একাটা জিনিস দেখা যায় তা হল অল্প বয়সের মেয়েদের ধরে ধরে ম্যামোগ্রাম করা হচ্ছে। আলট্রাসোনোগ্রাফি কিন্তু পঁয়ত্রিশ বছরের নীচের লোকেদের জন্য। আর ম্যামোগ্রাফ বছরের নীচের লোকেদের জন্য। আর ম্যামোগ্রাফ হচ্ছে পঁয়ত্রিশ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের জন্য। আলট্রাসাউন্ড করে সত্তর বছরের মহিলার ব্রেস্ট ক্যানসার ডায়াগনোসিস করা বাতুলতা। আবার ষোল বছরের একটি মেয়ের ম্যামোগ্রাফ করাটাও সেইরকমই বাতুলতা। কারণ ষোল বছরের মেয়ের ম্যামোগ্রাম করলে কিছু দেখা যাবে না। কারণ স্তন পুরোপুরি ডেভেলট না হলে ম্যামোগ্রাফিতে ধরা যায় না। পুরোপুরি সাদা দেখাবে। যদি ক্যানসার হয়েও থাকে সেটা আলাদা করে চেনা যাবে না। সেক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড অনেক বেশি কার্যকরী।

চিকিৎসা

প্রথমে রোগী দেখে আলট্রাসাউন্ড সোনোগ্রাফি করতে পাঠানো হয়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে আলট্রাসাউন্ডের রিপোর্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন নিজে এফ.এন.এ.সি বা কোর বায়োপসি করবে। এটা খুব গুরুত্বপর্ণ। এই যে অনেকে পাঠিয়ে দেন অমুক জায়গা থেকে এফ.এন.এ.সি-টা করিয়ে আসুন, তার ফলে হয় কী, ডাক্তারবুবু যে জায়গাটা সন্দেহ করছেন, রোগী দেখাল একটা জায়গা আর প্যাথলজিস্ট সে সবকিছুরই এফ.এন.এ.সি করে অভ্যস্ত—গলব্লাডার থেকে ব্রেস্ট, তাই সে হয়তো করল অন্য জায়গায়। ফলে মুশকিল হল এটা তো সত্যিক রিপ্রেজেন্ট করল না। তাই সবসময় এটা সার্জেনদের নিজের করা উচিত। কোর বায়োপসিও তাই অস্কো সার্জেনদের নিজেদেরই করা উচিত। অন্য জায়গা থেকে করিয়ে আসুন এসব চলে না ব্রেস্টের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এসব জিনিস অবশ্যই একই ছাদের তলায় হতে হবে। সকালে রোগী দেখে পরীক্ষাগুলো পরপর করে বিকেলেই তাকে বলে দেওয়া হয় ক্যানসার আছে না নেই।

যার ক্যানসার নেই সে তো নাচতে নাচতে বাড়ি চলে গেল। কিন্তু যদি প্রথম দিন রোগী দেখে কারপর ম্যামোগ্রাম লিখে দেওয়া হয় তবে তার রাতের ঘুম চলে যায়। তারপর ম্যামোগ্রাফির পর এফ.এন.এ.সি করিয়ে আনার কথা বললে তাতে আরও তিনদিন সময় চলে যাবে। মহিলাটির ওপর এভাবে মানসিক চাপ তৈরি করার কোনো মানে হয় না।

পরীক্ষায় যার ক্যানসার ধরা পড়লে তাকে বলা হল আপনার যে সমস্যা আছে সেটা ব্রেস্ট ক্যানাসার। ঠিক সময়ে ধরা পড়ায় সেরে যাবার সম্ভাবনা। তাই চিন্তা করবেন না। তাকে যথাসম্ভব কাউন্সেলিং করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আবার সেই পুরনো কথাটা বলতে হয় ‘ওয়ান স্টপ ব্রেস্ট ক্লিনিকে অভিজ্ঞ ব্রেস্ট সার্জেন, রেডিওলজিস্ট, প্যাথোলজিস্ট, মেডিকেল অস্কোলজিস্ট ও রেডিওথেরাপিস্ট একসঙ্গে বসে রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি স্থির করেন। যে হাসপাতালে এই বিশেষজ্ঞ দল যত বেশি সেখানে চিকিৎসার সুফলও আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়। ওয়ান স্টপ ব্রেস্ট ক্লিনিকে স্তনে ব্যথা, বিনাইন ব্রেস্ট ডিজিজ, নন ক্যানসারাস লাম্প সবকিছুরই চিকিৎসা করা এবং পরামর্শ দেওয়া হয়।

ব্রেস্ট ক্যানসার বৃদ্ধি কী কারণে

ব্রেস্ট ক্যানসার আগেও হত এখনও হয়। ব্রেস্ট ক্যানাসরের ঘটনাগুলো পঁয়তাল্লিশ, পঞ্চাশের পরে বাড়তে শুরু করে। আগে মহিলাদের গড় আয়ু ছিল পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন-ষাট। কিন্তু বর্তমানে আয়ু বৃদ্ধি হওয়ার কারণে এখন প্রচুর ষাট-সত্তরেরও রোগী পাওয়া যায়। তাছাড়া আগে মহিলারা নিজেদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে এতটা সচেতন ছিলেন না। শহরে যদিও কিছু মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু গ্রামে এখনও মহিলারা স্তনের কোনো ব্যাপার নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা বা চিকিৎসকদের কাছে আসেন না। আগে এই ব্যাপারটা প্রকট ছিল।

বর্তমানে আগের থেকে অনেক বেশি মানুষ সচেতন হয়েছেন এবং বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা শিবির হওয়ার কারণেও মানুষ এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে। এর সঙ্গে শিক্ষার প্রসারও রোগীদের ডাক্তারদের কাছে আসতে প্রভাবিত করেছে। আর এইসব কারণের জন্য অন্যান্য রোগের মতো ব্রেস্ট ক্যানসারও কী পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ছে সমাজে তার সংখ্যাতত্ত্ব উঠে আসছে মিডিয়ার কাছে। ফলে লোকে মনে করছে ব্যাপারটা হয়তো ভয়ানক পর্যায়ে চলে গেছে। আসল ঘটনা—কেস হিস্ট্রিগুলো জানা যাচ্ছে। ফলে প্রচারের আলোয় আসছে রোগীদের কথা। আলট্রাসোনোগ্রাফিও এখন গ্রামে গঞ্জে পৌঁছে গেছে, ম্যামোগ্রাফি হয়তো  নয়। ফলে অনেকে করিয়ে নিচ্ছে, জানতে পারছে। এগুলো কিন্তু আগে ছিল না এবং প্রচার বা প্রসার কোনোটাই আগে না থাকার দরুন অনেকেই হয়তো বেঁচে থাকার সুযোগ হারিয়েছেন। লোকে জানতেও পারত না মৃত্যুর কারণ।

ফলাফল

ব্রেস্ট ক্যানসার সম্বন্ধে অনেকে সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন ফলাফল ঠিক সেভাবে হচ্ছে না। এটা কিন্তু ঠিক নয়। ব্রেস্ট ক্যানাসরের তো কতকগুলো স্টেজ থাকে। যারা আর্লি স্টেজে আসেন তারা গ্যারান্টি দিয়ে কিওর হয়। এবার কেউ যদি ব্রেস্ট ক্যানসার হবার দু’ বছর বা তিন বছরের মাথায় আসে তখন হয়তো রোগটা অনেক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু চিকিৎসা ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারলে জীবনকে অনেকটাই দীর্ঘ করা সম্ভব। অনেক সময় এমনও দেখা যায় নাম করা হোমিওপ্যাথির ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন ক্যানসার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়ে যখন তাকে অপারেশনের কথা বললেন তখন তার শেষ অবস্থা। ভিতর থেকে মাংস ফেটে বেরিয়ে এসেছে।

এমন রোগীও আমাদের কাছে এসেছে যার অপারেশন হবে। তাকে প্রথমে তিনটে কোমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে, তারপর অপারেশন করা হয়েছ এবং তারপর আবার তিনটে কেমোথেরাপি দিয়ে অভাবনীয় রেজাল্ট পাওয়া গেছে। এই যে ছকটা এটা অনেকের ওপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু এই ছকটা সম্বন্ধে জানতে ব্রেস্ট ক্যানসার সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হতে হবে। চিকিৎসা, অপারেশস হয়ে গেল মানেই সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল, তা নয়। সবসময় নিজের ডেটা রাখতে হবে। রোগীদের সঙ্গে বছরে একবার হলেও নিজে কথা বলতে হবে। সব সময় টাচে রাখতে হবে। কারণটা কী?

ব্রেস্ট ক্যানসার হলে অন্য ব্রেস্টে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা ২০%। তাই একটা ব্রেস্ট অপারেশন করে রোগীর কাছে ভগবান হয়ে গেলাম, অন্য ব্রেস্টে ফিরে এল কি না দেখতে হবে না! কাজেই ডাক্তার হিসেবে আমারও তো একটা কর্তব্য আছে। রোগীর পরবর্তী অবস্থাটা কেমন থাকে সেটা দেখার। ব্রেস্ট ক্যানসার যেটা আর্লি স্টেচে, তাদের ক্ষেত্রে ‘মাস্টেকটমি’ অর্থাৎ ব্রেস্ট বাদ দেবার দরকার হয় না। এদের ক্ষেত্রে লাম্পটা বের করে রেডিওথেরাপি করা হয়। তারপরে প্রয়োজনমতো কেমোথেরাপি বা হরমোন থেরাপি।

অনেকে বলেন ওরাল কনট্রাসেপটিভ নিলে ব্রেস্ট ক্যানসার হয় কি না। এই ওষুধ যারা খায় তাদের গড় বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর। ত্রিশের পর মেয়েরা সাধারণত বাচ্চা নেবার জন্যই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা যায় কেউ যদি টানা চার বছর ওরাল কনট্রাসেপটিভ খায় তাহলে এক লক্ষ মহিলার মধ্যে একজনের ব্রেস্ট ক্যানসার হবার সম্ভাবনা থাকে। টানা চারবছর সাধারণত কেউ খায় না। বন্ধ করে আবার খায়। এভাবেই চলে। তাই সম্ভাবনটাও খুব কম হয়। হরমোন রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপারটা মেনোপজের পর দেওয়া হয়। যাতে হট ফ্ল্যাশের কারণে পড়ে গিয়ে হাত-পা না ভাঙে। এদের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে যারা শুধুমাত্র ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ ট্যাবলেট খান তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু আজকাল হরমোন রিপ্লেসমেন্টের জন্য যে ট্যাবলেট পাওয়া যাচ্ছে তা হল ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের কম্বিনেশন। শুধু ইস্ট্রোজেন ট্যাবলেট আর পাওয়া যায় না।

এখানেও এক লাখের মধ্যে একজনের হতে পারে। তারপরেও আছে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিই বা কতজন মহিলা নেন? যারা নেন তারাও চার-পাঁচ বছর পর বন্ধ করে দেন। কিন্তু থেরাপিই বা কতজন মহিলা নেন? যারা নেন তারাও চার-পাঁচ বছর পর বন্ধ করে দেন। কিন্তু নিলে লাখে একজনের। তাছাড়া ক্ষণভঙ্গুর হাড়কে মজবুত করতে এই ট্যাবলেটের প্রয়োজন আছে বই কি ! তাই যিনি হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি করাচ্ছেন তিনি যেন ভীত না হন।

যেহেতু ব্রেস্ট ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সেরে যায় সেক্ষেত্রে কিন্তু উনি যদি এ ব্যাপারে নিজে সজাগ থাকেন তাহলে উনি তো সেরেই যাবেন। তাই এক্ষেত্রে ওনার ‘শ্যাম-ও রইল কুল-ও রইল।

কোর বায়োপসি

এফ.এন.এ. কিন্তু আজকাল উঠেই গেছে। কারণ এফ.এন.এ.সি-তে কয়েকটা মাত্র কোষ পাওয়া যায়। কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যায় কোষ না দেখা যাওয়ার তা থেকে রিপোর্ট বের করা অসম্ভব। তাই এসেছে কোর বায়োপসি। এটা আর কিছুই তাই এসেছে কোর বায়োপসি। এটা আর কিছুই নয়। কান ফুটো করে যেমন বন্দুক দিয়ে, ঠিক সেরকমই একটা জিনিস। লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করে নিডলের সাহায্যে ব্রেস্টের খানিকটা টিস্যু তুলে আনা হয়। এই পুরো ব্যাপারটা হাসপাতালে আউটডোরেই করা হয়। এতে সেলাইও করতে হয় না। এর ওপর যাবতীয় পরীক্ষা করা চলে এবং এফ.এ.সি-র চাইতে অনেক ভালো ফল দেয়।

আগে যেমন স্তনে চাকা হলে কেটে বায়োপসি করা হত, তারপর দেখা গেল ক্যানাসর। তখন আবার অপারেশনের প্রয়োজন। তাহলে দু’ সপ্তাহের মধ্যে দু’বার অপারেশন করতে হচ্ছে। এই কোর বায়োপসি আসার পরে ক্যানসারকে সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

পরিবারে রক্ত সম্পর্কিত কারো যদি ব্রেস্ট ক্যানসার থাকে তাহলে মা-মাসি-দিদি-পিসির ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ২২ থেকে ৩২ শতাংশ চান্স থাকে ব্রেস্ট বা ওভারিতে ক্যানসার হবার। এক বোনোর ব্রেস্টে হলে অন্য বোনের ওভারিতে হতেই পারে, এটা কিন্তু রিলেটেড জিনগত। আমি এক বোনের ব্রেস্টাটার চিকিৎসা করছি কিন্তু অন্য বোনের ওভারির দিকে নজর দিতে হয়। যদিও চিকিৎসা আমি করব না, যিনি করেন তার কাছে পাঠাব। এটা আমার কর্তব্য।

টাটা মেমোরিয়ালে ঠিক এভাবেই হয়। আর সেজন্যই আজ টাটা মেমোরিয়াল এত সাকসেসফুল হয়েছে। এভাবে করতে পারলেই একটা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা সম্ভব। না হলে একজনের হয়েছে বলে তার পরিবারের অন্যজনের ব্যাপারে আমি মাথা ঘামাব না, এটা কখনোও ঠিক পথ নয়।

লাম্পস যদি না থাকে তাহলে স্ক্রিনিংয়ের কথা বলা হয়। ৪০-৫- বছর বয়সের পরে প্রত্যেক মহিলার দু’বছর বা তিন বছর অন্তর একটা ম্যামোগ্রাম করা উচিত। ওই ম্যামোগ্রামে যদি দেখা যায় একটা ছোট্র স্পট আছে যেটা হাতে পাওয়া যাচ্ছে না এদের জন্য একটা ‘গাইড অয়ার লোকালাইজেশন’ আছে। এই অপারেশন্ট খুব সুন্দর।

কোনো মহিলা পঞ্চাশে ম্যামোগ্রাম করলেন। দেখলেন পরিষ্কার। আবার চুয়ান্নতে করলেন দেখলেন একটা জায়গা সন্দেহজনক। কিন্তু হাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে সুঁচটা ফোটানো হবে কী করে। রোগীকে কী বলব ছ’মাস পরে আসুন? এদের ক্ষেত্রে একটা স্পেশাল ম্যামোগ্রাম করা হয়। যখন ছবি নেওয়া হয় একটা তার ওখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় লোকাল অ্যানান্থেশিয়া করে। স্টেজিংয়ের মতো। ভিতরে ঢুকে ওটা ছাতার মতো হয়ে খুলে আটকে যায়। এবার তারটা ফলো করে ওই জায়গাটা একটুখানি কেটে বাদ দেওয়া হয়। এরপর ওই জিনিসটাকে এক্স-রে মেশিনে দেওয়া হয়। দেখা হয় ম্যামোগ্রামের সঙ্গে জিনিসটা ম্যাচ করেছে কি না। মানে সাধারণ এক্স-রে ও ম্যামোগ্রামের এক্স-রে দুটো ঠিক আছে কি না। যদি দেখা গেল হ্যা ম্যাচ করেছে, শ্যাডো-টা এসেছে তাহলে এবার ওটা বায়োপসি করা হল। রোগী বাড়ি চলে গেল।

বায়োপসি করে যদি দেখা যায় ক্যানাসর নেই তাহলে তো কোনো কথাই নেই। যদি ক্যানাসর হয় তাহলে রোগীকে চিকিৎসা করে ভালো করা তো কোনো ব্যাপারই নয়। ওইটুকু ক্যানাসারের জন্য রেডিওথেরাপির দরকার পড়ে না। কোমোথেরাপিরও দরকার পড়ে না। ক্যানসারকে কিওর করতে সার্জারির প্রয়োজন। সার্জাারি যার হবে না শুধু কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি করে ভালো হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

হরমোন ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় সেই সব মহিলাদের যাদের সত্তর বা আশি বছর বয়স। ‘ট্যামোক্সিফেন’ দেওয়া হয়। হরমোন রিসেপটর পজেটিভদের বড় ক্যানসার শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। কোনটা কার জন্য বিশে প্রয়োজন, কোনটা আগে হবে কোনটা পরে হবে সেটা দেখাই হচ্ছে সার্জেনের কাজ।

পরিবারে যার হয়েছে তার রক্ত সম্পর্কিতদের জন্য জেনেটিক পরীক্ষা করা যায়।

বি.আর.সি.এ ১, বি.আর.সি.এ ২ টেস্ট জিন। রক্ত পরীক্ষা করা যায়।

বি.আর.সি.এ পজেটিভ হলেই ব্রেস্ট ক্যানসার হবে তার কোনো মানে নেই। কিন্তু তার ওপর পাখির মতো নজর রাখতে হবে।

নিজে নিজে পরীক্ষা করবে বাথরুমে, জামাকাপড় পরার সময় স্পর্শ করে দেখবে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না। বুঝতে না পারলে দেখিয়ে দেওয়া হয় কীভাবে পরীক্ষা করতে হয় যাতে স্বাভাবিকের থেকে অন্যরকম হলে বুঝে নিতে সুবিধা হয়।

বিদেশে দেখা গেছে পরিবারে কোনো পুরনো ইতিহাস থাকলে ক্যানসার থেকে বাঁচতে ব্রেস্টকে বাদ দিয়ে রিকনস্ট্রাকশন করে দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না। ব্রেস্ট টিস্যু না থাকলে তো ব্রেস্ট ক্যানসার হবে না। চামড়ায় তো আর ব্রেস্ট ক্যানসার হবে না। অনেক রকম উপায়ই আছে । যার পক্ষে যেটা সুবিধাজনক সে সেই পন্থা নিতে পারে।এবং এভাবেই ক্যানাসরকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।


সৌজন্যে: ‘সুস্বাস্থ্য’ – কলকাতা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন